নৌযান শ্রমিকদের মজুরি প্রদান ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জরুরি সভা: কর্মবিরতি ও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী

নৌযান শ্রমিকদের মজুরি প্রদান ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জরুরি সভা: কর্মবিরতি ও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী

 

আজ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যাত্রীবাহী নৌযানের শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী মজুরি প্রদান এবং এম. ভি. মানামী জাহাজের শ্রমিকদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশন ঢাকা আঞ্চলিক কমিটি ও নদী বন্দর কমিটি। সভাপতিত্ব করেন নদী বন্দর কমিটির সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন ড্রাইভার এবং সভা পরিচালনা করেন ঢাকা আঞ্চলিক কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক আতিকুল ইসলাম টিটু।

**সভায় উপস্থিত ছিলেন:**
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ শাহ আলম ভূঁইয়া। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশন ঢাকা আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু সাইদ ড্রাইভার, সহ-সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর খান মাস্টার, নদী বন্দর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর আলম মাস্টার, কার্যকরী সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমান মাস্টার, সহ-সভাপতি মোঃ শাহ জাহান মাস্টার, মোঃ মানিক শরীফ মাস্টার, উপদেষ্টা মোঃ দেলোয়ার হোসেন মাস্টার এবং প্রচার সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মিজানুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

**গেজেট অনুযায়ী মজুরি প্রদান না হওয়া:**
বক্তারা তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, নৌযান শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সরকার নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করলেও, এখনও যাত্রীবাহী নৌযানের শ্রমিকরা সেই গেজেট অনুযায়ী মজুরি পাচ্ছেন না। অধিকাংশ শ্রমিকদের ৪-৫ মাসের মজুরি বকেয়া রয়েছে, যা তাদের জীবনে চরম সংকট সৃষ্টি করছে। শ্রমিকরা যখন তাদের ন্যায্য মজুরি দাবি করেন, তখন তাদের চাকরিচ্যুত করা হয় এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।

**বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি:**
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, বিআইডব্লিউটিএ এর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার কারণে নৌযান পরিচালনার প্রচলিত আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কর্মকর্তা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার জন্য নানা অজুহাত দিচ্ছেন এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে বাধা সৃষ্টি করছেন।

**এম. ভি. মানামী শ্রমিকদের হয়রানি ও সেনাবাহিনীর ভয় দেখানো:**
সভায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, এম. ভি. মানামী জাহাজের শ্রমিকরা যখন তাদের গেজেট অনুযায়ী মজুরি দাবি করেন, তখন কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরিচ্যুত করতে বাধ্য করে এবং মজুরি পরিশোধ না করে নানা হয়রানির শিকার করে। শ্রমিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তাদেরকে অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। আরও গুরুতর অভিযোগ হলো, শ্রমিকদেরকে ভয় দেখাতে কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর ভয় দেখায়, যাতে তারা ন্যায্য পাওনা দাবি করতে সাহস না পায়। উপরন্তু, শ্রমিকদের নামে মিথ্যা হত্যা প্রচেষ্টা মামলা দায়ের করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।

**কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি:**
বক্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যদি দ্রুত শ্রমিকদের গেজেট অনুযায়ী মজুরি প্রদান, চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করা হয়, তবে তারা কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচী পালনে বাধ্য হবেন। তারা হুঁশিয়ারি দেন যে, ন্যায্য অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং এর জন্য সকল দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।

**সরকার ও কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান:**
সভায় অংশগ্রহণকারীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানান। শ্রমিকদের দাবি অবহেলা করা হলে নৌযান শিল্পে অস্থিরতা তৈরি হবে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বক্তারা আরও বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে তাদের আন্দোলন আরও ব্যাপক হবে।

সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয় যে, নৌযান শ্রমিকদের গেজেট অনুযায়ী মজুরি প্রদান এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে, তারা কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করবেন। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

Facebook Comments Box





© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ দৈনিক নাগরিক বাণী